Banner

স্মরণশক্তি বৃদ্ধির আমল। যে আমল করলে আপনার সন্তানের জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে।

 

আমাদের সমাজের অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন পরীক্ষায় ভালো মার্ক পাওয়ার জন্য কি দোয়া পড়তে হবে। বা কোন দোয়া বেশি বেশি পড়লে পরীক্ষায় ভালো মার্ক পাওয়া যায়।


তাদের কে  বলব জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সাধারণত সুরা ত্বহার ১১৪ নং আয়াতের শেষ অংশ পড়া হয় "রাব্বি জিদনি ইলমা" বা  
হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।


দোয়াগুলো সবসময়ই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সহজ করার জন্য নয়। যদি দোয়া প্রশ্ন সহজ করতো, তাহলে সবাই সে দোয়া পড়ে GPA 5 পেত। তবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, যেন তিনি আপনার জ্ঞান অর্জনের পথকে সুগম করে দেন। নিয়মিত অধ্যয়ন করলে দেখবেন, প্রশ্নপত্র নিজে থেকেই সহজ মনে হবে।

যদি আপনার সন্তান পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা মনোযোগ দিতে না পারে এবং যা পড়ে তা অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যায়, তাহলে নিচের দোয়াটি তাকে শিখিয়ে দিন। প্রতিদিন পড়াশোনা শুরু করার আগে, 'আউজুবিল্লাহ' ও 'বিসমিল্লাহ' সহকারে এই দোয়াটি পড়তে বলুন।

আল্লাহর রহমতে, আপনার সন্তান ধীরে ধীরে পড়া মনে রাখতে পারবে এবং পড়াশোনায় মনোযোগ দেবে। শুধু তাই নয়, যদি সে কথা বলার সময় জড়তা অনুভব করে বা বাক্য গঠনে সমস্যা হয়, আল্লাহ চাইলে সেই জড়তা থেকেও মুক্তি পাবে।

এই দোয়া পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে: মূসা (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার বক্ষকে প্রশস্ত করুন, আমার কাজকে সহজ করুন এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করুন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত: ২৫-২৮)

 

 দোয়ার সঠিক উচ্চারণ হলো:

"রাব্বি জিদনি ইলমা। রব্বিশ্ রাহ্‌লি ছদ্‌রি, ওয়া ইয়াস্‌সির্‌লি আম্‌রি, ওয়া-হ্‌লুল উক্‌দাতাম্‌ মিল্‌লিসানি, ইয়াফ্‌কাহু ক্বাউলি। রাব্বি ইয়াস্‌সির্‌, ওয়া-লা তু’আস্‌সির্‌, ওয়াতাম্‌মিম্‌ বিল্‌খইর্‌।"

অর্থ: "হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন, আমার বক্ষ প্রশস্ত করুন, আমার কাজ সহজ করে দিন, আমার জিহ্বার জড়তা দূর করুন যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। হে আমার প্রভু, আমার জন্য সহজ করুন, কঠিন করবেন না এবং আমাদের পরিণাম কল্যাণময় করুন।"

এই দোয়া নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে আপনার সন্তান ধীরে ধীরে ইলমের পথে অগ্রসর হবে এবং কথার জড়তা থেকেও মুক্তি পাবে, ইনশাআল্লাহ।


রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতদেরকে দোয়া করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষাদান করে বলেছেন, "তোমরা এভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, হে আল্লাহ, আপনি যা সহজ করেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর আপনি চাইলে, কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়।" (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস-৯৭৪)।

ইলম বা জ্ঞান হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এক বিশেষ অনুগ্রহ ও মহাদান। মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিই হলো ইলম বা জ্ঞান। কেবল মানুষকেই বাকশক্তির অধিকারী করা হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন বিষয় সাবলীলভাবে প্রকাশ করতে পারে এবং একে অপরের কথা সহজেই বুঝতে পারে। মানুষের এই অসাধারণ ক্ষমতা আল্লাহর মহান নিয়ামত। তিনি মানুষকে জ্ঞান দিয়ে সম্মানিত করেছেন, তাদের স্মরণশক্তি দিয়েছেন যা মানুষকে অজানা বিষয়গুলো জানার এবং তা মনে রাখার সুযোগ করে দেয়। যদিও কখনো কখনো মানুষ তার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে মনে রাখার বিষয়গুলোও ভুলে যায়। এই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা এক ধরনের দুর্বলতা। আরবিতে বলা হয়, "আফাতুল ইলমি আন নিসইয়ান," অর্থাৎ জ্ঞানের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো ভুলে যাওয়া।

এ বিপদ থেকে মুক্তি পেতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন: "হে আমার প্রভু, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।" (সূরা ত্বহা, আয়াত: ১১৪)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, যদি ইলম ছাড়া অন্য কোনো আমল আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হতো, তবে তিনি নবী করিম (সা.)-কে সেটির বৃদ্ধির জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিতেন।

কুরআনে কোথাও নবী করিম (সা.)-কে ইলম ছাড়া অন্য কোনো বিষয় বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতে বলা হয়নি।

তাই, যারা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য উপদেশ হলো—আপনার সন্তানকে বেশি বেশি এই দোয়াটি পড়তে বলুন এবং নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনার সন্তানের সকল জড়তা ও সমস্যাগুলো কেটে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ